অজয় বৈদ্য অন্তর:: সিলেটের বন্ধু পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন মন্ত্রী ঐতিহাসিক রেজিস্ট্রারি মাঠে সিক্ত হচ্ছেন নাগরিক সংবর্ধনায়। সিলেটের উন্নয়নে অবদান রাখায় অনেক আগেই সংবর্ধনা প্রাপ্তি ছিল পররাষ্ট্রমন্ত্রীর। অতীতে এ ধরনের সংবর্ধনার রীতি প্রচলন আছে। সিলেটের নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ভূয়সী প্রশংসা পাওয়া যোগ্য ভুমিকা রাখছেন ড. একে আব্দুল মোমেন। আর তাই এবারও নানা আয়োজনে সাজিয়েছেন সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মাঠ।
সিলেটের উন্নয়ন টিমওয়ার্কে প্রধান হিসেবে কাজ করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। তিনি সিলেট জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীও। তার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন বিএনপিদলীয় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। উন্নয়ন প্রশ্নে কখনো দু’জনের মধ্যে কোনো বিরোধ বাধেনি। বরং একে অপরকে সব সময় সহযোগিতা করে আসছেন। এ কারণে সরকারের দেয়া টাকায় সিলেট নগর সাজাতে কাজ করছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এতে তিনিও হচ্ছেন প্রশংসিত। মেয়রের এই কর্মকাণ্ড নিয়ে ক্ষোভ আছে আওয়ামী লীগে।
কয়েকদিন আগে সিলেটে এক মতবিনিময় সভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে এ অভিযোগ করেছিলেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তারা জানিয়েছিলেন, মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী কাজ করছেন সরকারের টাকায়। অথচ এই উন্নয়নগুলোকে তিনি নিজের উন্নয়ন বলে চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে বাহবা পাচ্ছে না আওয়ামী লীগ কিংবা মন্ত্রীও। এ কারণে সিলেট উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনের মাধ্যমে সিলেটের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার জন্য মন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তাদের এই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছিলেন মন্ত্রী নিজেই।
আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, বর্তমান সরকারের এই মেয়াদের শাসনে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে সরকার থেকে উন্নয়নের জন্য ১২শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এই টাকায় মেয়র সিলেটে উন্নয়ন করছেন। কিন্তু এই উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বিএনপিদলীয় শীর্ষ নেতা হলেও তিনি সবসময়ই সিলেটের মন্ত্রী পরিবারের আনুকূল্য পেয়েছেন। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত সিলেট-১ আসনের এমপি থাকাকালে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সিটি করপোরেশনের আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় প্রার্থী ও সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে পরাজিত করেই মেয়র নির্বাচিত হন। এরপর থেকে উন্নয়ন প্রশ্নে মেয়র সাবেক মন্ত্রীর সব ধরনের সহযোগিতা পেয়েছেন। ড. মুহিত সিলেটের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড আরিফুল হক চৌধুরীর হাত ধরে পরিচালনা করেন। এ কারণে সাবেক মন্ত্রীর সঙ্গে মেয়র আরিফের বোঝাপড়া ভালো ছিল।
এর বাইরেও সিলেট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশফাক আহমদের হাত ধরে শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন এলাকায় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হয়। এরপর গত সংসদ নির্বাচনে সিলেট সদরের এমপি হন বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। তার সঙ্গেও উন্নয়ন প্রশ্নে আরিফুল হক চৌধুরীর টিমওয়ার্ক গড়ে উঠেছে।
সিলেটের উন্নয়নে মন্ত্রীর জন্যই হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজনেরা। তারা জানিয়েছেন, এ কারণে এবার সিলেট নগরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দৃশ্যমান হচ্ছে। আর টাকা দিলেও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে মন্ত্রী কিংবা আওয়ামী লীগের তরফ থেকে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে না। এতে করে নির্ভর হয়েই সিলেটের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
এ ছাড়া, দুই মেয়াদে সিটি করপোরেশন পরিচালনা করতে গিয়ে এবার কিছুটা বিতর্কের মুখে পড়েছেন মেয়র নিজেই। বর্তমানে সিলেট নগরে তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ বিরাজ করছে। সিলেট সিটি করপোরেশনের পানির বিল বাড়ানোকে কেন্দ্র করে প্রায় প্রতিদিনই সিলেটে মানববন্ধন ও সভা হচ্ছে। অসন্তোষ থেকে নগরবাসী এ আন্দোলন চালাচ্ছেন। এ ছাড়া, নগরের সাপ্লাই রোড, শিবগঞ্জ রোড সহ কয়েকটি সড়কের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের দীর্ঘসূত্রতা মেয়রকে বিতর্কিত করে তুলছে। শুষ্ক মৌসুমে এ দুটি সড়কে পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি যানবাহন চলাচলে মারাত্মক ভোগান্তি হচ্ছে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের কয়েকজন কাউন্সিলর জানিয়েছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনকে নাগরিক সংবর্ধনা দেয়া হবে এতে কারও আপত্তি নেই। বরং সবারই এতে মত রয়েছে। কিন্তু আইন অনুযায়ী সিটি করপোরেশনের নাগরিক সংবর্ধনার বিষয়টি মাসিক সভায় সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সেটি না করে ৩ দিন আগে মেয়র তার অনুসারী কয়েকজন কাউন্সিলরকে নিয়ে বৈঠক করে নাগরিক সংবর্ধনার আয়োজন করেন। এবং পরবর্তীতে চিঠির মাধ্যমে কাউন্সিলররা সেটি অবহিত হন। এতে করে সিটি করপোরেশনের অনেক কাউন্সিলর এই সংবর্ধনায় উপস্থিত না-ও হতে পারেন। এ ছাড়া, আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরেও বিষয়টি নিয়ে কানাঘুষা চলছে।
এদিকে- পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের এই সংবর্ধনাকে ঘিরে সিলেটের রেজিস্ট্রারি মাঠে চলছে সাজ সাজ রব। গতকাল সকাল থেকেই শুরু হয়েছে প্যান্ডেল নির্মাণ সহ নানা কর্মকাণ্ড। ইতিমধ্যে রেজিস্ট্রারি মাঠে জমকালো আয়োজন নজর কাড়তে শুরু করেছে নগরবাসীর। প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ছবি দিয়ে সমাবেশস্থলের ফটক নির্মাণ করা হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেয়া হচ্ছে সিলেট উন্নয়নে অবদান রাখায়। বিশেষ করে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীত করে কাজ শুরু করায় মন্ত্রীকে সিলেটে এই নাগরিক সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া, সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নতুন কার্গো হাউস ও বোডিং হাউস নির্মাণ এবং ঢাকা-সিলেট রেলপথ উন্নয়নের অবদান রাখায় এই সংবর্ধনা প্রদান করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
এবিএ/২৯ ডিসেম্বর